Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped


মুক্তিযোদ্ধার তালিকা

শাঁখারীবাজারের মুক্তিযোদ্ধা

১৯৭১ সালে অমর সুর ছিলেন পোগোজ স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থী। ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে ঢাকার অন্যান্য এলাকার মতো শাঁখারীবাজারেও চলে পাক হানাদার বাহিনীর হামলা। ২৬ মার্চ থেকে পুরো এপ্রিল পর্যন্ত পাকসেনারা নির্মমভাবে হত্যা করে শত শত অসহায় সাধারণ শাঁখারীকে। ২৬ মার্চ বিকেলে পাকসেনারা ৪৭, শাঁখারীবাজারে সর্বপ্রথম তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। হত্যা করে বাবা ও ছোট ভাইকে। সে সময় অন্য ১৭ জন শাঁখারীকেও হত্যা করা হয়। বাঁচার জন্য বাড়ির পেছন দিয়ে অন্যত্র পালিয়ে যান তিনি। ২৭ মার্চ দেখতে এসে পান বাবা ও ছোট ভাইয়ের মৃতদেহ। ২৮ মার্চ দুপুর ১২টা থেকে ১টার সময় ৩৬, শাঁখারীবাজারের ডা. নিশিহরি নাথকে যখন পাকসেনারা হত্যা করে তখন শাঁখারীবাজারের বাসিন্দারা চলে যান বুড়িগঙ্গার ওপারে জিনজিরায়। পাকসেনারা যখন জিনজিরায় আক্রমণ চালায় তখন অন্যদের মতো তিনিও সপরিবারে চলে যান নবাবগঞ্জ থানার দিকে। গোয়ালন্দ ঘাটে তার ছোট বোন ও মাসী গুলিবিদ্ধ হন। ২১ এপ্রিল তিনি হারিয়ে ফেলেন মা ও ছোট ভাইকে। তারপর উপায়ন্তর না পেয়ে আবার চলে আসেন শাঁখারীবাজারে নিজেদের বাসায়।

বাড়িঘর সবকিছুই পুড়ে ছাই। শাঁখারীবাজারের বাতাসে শুধু মৃত মানুষের গন্ধ আর ধ্বংসাবশেষ। ছোট বোনের খোঁজ করতেই শাঁখারীবাজারের লোকজন জানায় নূরা ডাক্তারের কথা। তাদের কথামতো তিনি নূরা ডাক্তারের বাসায় যান। দেখা হলে নূরা ডাক্তার জানান, তার ছোট বোন আছে মিটফোর্ড হাসপাতালে। তার ডান কাঁধ দিয়ে একটি বুলেট ঢুকে বাম বুক দিয়ে চলে গেছে। সেজন্য জরুরিভাবে অপারেশন করা প্রয়োজন। কিন্তু নগদ টাকা না থাকায় বিভিন্ন কৌশল করে তিনি ডাক্তার ও স্কুলবন্ধুদের নিয়ে

মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংকে যান। সে ব্যাংক এখন রূপালী ব্যাংক লিমিটেড। টাকা তুলে তিনি নবাবপুর থানায় আসেন। ডাক্তার টাকা নিয়ে তার বোনের চিকিৎসা করেন। নবাবপুর এসে জানতে পারেন তার ভাই বেঁচে আছে। ভাইকে পাওয়ার জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলে রাজবাড়ীর এক ভদ্রলোক তার ভাইয়ের কথা জানান। সেই লোকের কাছে খুঁজে পান তার হারানো ভাইকে। কিন্তু সে লোকের কোনো সন্তান না থাকায় তিনি অমর সুরের ভাইয়ের লালন-পালন করার দায়িত্ব নেন। অন্যদিকে দ্রুত চিকিৎসা সুবিধা পাওয়ায় বেঁচে যায় ছোট বোনটিও। এখন দুই ভাই-বোনই থাকেন কলকাতায়।

মুক্তিযুদ্ধের সেই ঘরছাড়া লাখ লাখ শরণার্থী, অস্ত্রের ভয়ে নির্জন গুহায় বন্দি মানুষ, গ্রামগঞ্জ আর পাহাড়-জঙ্গলে পলাতক নারী-পুরুষ, বুটের আঘাতে পিষ্ট হওয়ার ভয়ে রাইফেল আর বেয়নেট থেকে দূরে, স্কুলঘরে গাদাগাদি করে থাকা অনেক মানুষের দুর্গতির সেই ভয়াল চিত্রের ভয়ে তারা আর ফিরে আসেননি। কিন্তু বড় ভাই অমর সুর বাবা-মার বসতভিটায় জীবনযাপন করছেন। আরেক শহীদ সন্তান নীলকান্তি দত্তের বাবা জগৎভুষণ দত্তকেও ২৬ মার্চ বিকেল ৪টা ৪৯ মিনিটে পাকবাহিনী ৪০, শাঁখারীবাজারে গুলি করে হত্যা করে। মহান মুক্তিযুদ্ধে শাঁখারীবাজারের আত্মদানকারী শহীদদের স্মৃতি রক্ষার জন্য শহীদ স্মৃতিসৌধ সমিতি ১৯৭১ সালে শাঁখারীবাজারে নির্মাণ করে ‘শহীদ মিনার’।