স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা
স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা উপমহাদেমের মধ্যে একমাত্র ঐতিহ্যবাহী বৃহত্তম বে-সরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান। নগরীর ৪৮,আজিমপুরে এই এতিমখানাটি প্রতিষ্ঠিত। স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিখানাটি ১৬ বিঘা জমির উপর অবস্থিত। এতিম খানায় বর্তমানে প্রায় তিনশত জন আবাসিক ছাত্র ও ছাত্রী আছে। এই এতিম খানায় ৬১জন শিক্ষক আছেন। এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৪ শত ৬১ জন এতিম ছেলে-মেয়ে পড়াশোনা শেষ করে সমাজের বিভিন্ন সেক্টরে পূনর্বাসিত হয়েছে।
পূর্বের ইতিহাস
ঢাকার উন্নয়নমুলক কাজে পুরনো ঢাকার নবাব পরিবারের বদান্যতার কথা সুবিদিত। এ পরিবারের কারো কাহিনী ছিল কিংবদন্তির মতো। আজকের ঢাকার অনেক জনহিতকর প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা যুগের পর যুগ সেই স্বাক্ষ্য বহন করে চলছে। আজিমপুরে অবস্থিত স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিম খানা ঢাাকর নবাবদের প্রতিষ্ঠিত এমনই এক দাতব্য প্রতিষ্ঠান এই এতিমখানাটিই বাংলাদেশের সর্বপ্রথম ও সর্ববৃহৎ অনাথ আশ্রম। কালের যাত্রাপথে ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘপথ অতিক্রম করে চলেছে।
যেভাবে এতিমখানা হলো
নবাব সলিমুল্লাহর “াত্র কন্যা ১৯০৯ সালে অকাল মৃত্যুবরণ করেন। এ অতর্কিত ঘটনায় নবাব ও তার স্ত্রী আসমত-উন-নেসা অত্যন্ত ব্যথিত হন। প্রাণপ্রিয় সন্তানের অকাল মৃত্যুতে তারা একেবারেই ভেঙে পড়েন। বাবা-মা হারা স্নেহ বঞ্চিত শিশুদের জন্য তাদের মন কেঁদে ওঠে। এতিম সন্তানদের জন্য একটি আশ্রয়স্থল গড়ে তোলার মাধ্যমে সন্তান হারানো বেদনা কিছুটা দূর করার জন্য চেষ্টা করেন। ইতিহাস অনুসন্ধানে ১৯০৯ সালে নবাব সলিমুল্লাহ ‘ইসলামিয়া এতিমখানা’ নামে এ অনাথ আশ্রমের সূচনা করেন।
প্রথমে যেখানে থেকে শুরু
সর্বপ্রথমে আহসান মঞ্জিলের পাশে কুমারটুলীর এক ভাড়া বাড়িতে এতিমখানাটির কার্যক্রম শুরু হয়। সে সময় নবাব এর জন্য প্রতিমাস দুইশত টাকা অনুদান দিতেন এতিমখানার ব্যয় বৃদ্ধি পেলে ১৯১২ সালে সাধারণের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়।স্থান সংকুলান না হওয়ায় ১৯১৩ সাল লালবাগে এটি স্থানান্তর করা হয়। একই বছর বাংলার গভর্নর লর্ড কারমাইকেল ঢাকা সফরে আসেন। তিনি এতিম খানাটি পরিদর্শন করেন এবং সন্তুষ্ট হয়ে এক হাজার টাকা অনুদানের পাশাপামি সরকারি খাজ জমি বন্দোবস্তের ব্যস্থা করেন।
এরপর স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানার স্থায়ী ভবন নির্মাণের জন্য আজিমপুর (আমলাপাড়া) গোর-এ শহীদ মসজিদের পাশে এক খণ্ড খাস জমি নিয়ে এতিমখানার স্থায়ী আবাস নির্মাণ করা হয় নবাব সলিমুল্লাই এতিমখানা নির্মাণের বেশির ভাগ ব্যয় বহন করেন।এটি সে সময় নির্মাণের সময় লাগে দু’বছর।
স্যার সলিমুল্লাহর মৃত্যুর পর
১৯১৫ সালে নবাবের মৃত্যু হলে ঢাকাবাসীর চেষ্টায় তা রক্ষা পায়। অনেকেই আর্থিক সহযোগিতায় সে সময়ে এগিয়ে আসেন। এ সময় এর নাম স্যার সলিমুল্লাহ নামে নামকরণের দাবি-ওঠে। ১৯১৬ সালে এতিমখানাটি আজিমপুরের বর্তমান স্থানে স্থানান্তর করা হলে নাম পরিবর্তন করে প্রতিষ্ঠার নামে স্যার সলিমুল্লাহ এতিমখানা নামকরণ করা হয়।
এতিম খানায় আর্থিক অনটন
নবাব সলিমুল্লাহর মৃত্যুর পর এতিমখানায় আর্থিক অনটন দেখা দেয়। অন্যদিকে দিনে দিনে বাড়তে থাকে এতিমদের সংখ্যা। সেই সময় নবাব পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এগিয়ে আসেন। তাদের অকৃপণ সাহায্যে এতিমখানাটির কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়।
পিতার স্মৃতি ও স্বপ্ন
পিতার স্মৃতি ও স্বপ্নকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নবাব হাবিবুল্লাহ এতিমখানা পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯১৬ সালে লর্ড কারমাইকেল আবার ঢাকা সফরে এসে এতিম খানাটিকে পরিদর্শনে আসেন এবং নবাব হাবিবুল্লাহ ওয়ার্ড এর ভিত্তি প্রস্তুর স্থাপন করেন। ১৯২৩ সালে ‘স্যার সলিমুল্লাহ এতিমখানা’ বড় রকম আর্থিক সংকটে পড়েন। চরম এ দুঃসময়ে এটির হাল ধরেন স্যার সলিমুল্লাহর ঘনিষ্ঠ বন্ধু খান বাহাদুর ফরিদ উদ্দিন সিদ্দিকী।
১৩৩১ সালে বাংলার গর্ভণর স্যার স্ট্যানলি জ্যাকসনের স্ত্রী লেডি জ্যাকসন এতিমখানা পরিদর্শনে এসে স্যার আহসান উল্লাহ ওয়ার্ড নামে একটি ভবন উদ্বোধন করেন। ১৯৩৬ সালে এতিমদের জন্য তিনি হাইস্কুল এবং একই বছর পলিটেকনিক জুনিয়র মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালের মে মাসে নবাব হাবিবুল্লাহ বাহাদুরের সভাপতিত্বে খান বাহাদুর ফরিদ উদ্দিন সিদ্দিকী এর অবৈতনিক সম্পাদকের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন এবং স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা নামে নতুন নামকরণ করেন। খান বাহাদুর ফরিদ উদ্দিন সিদ্দিকীর পর দেশের বিশিষ্ট সমাজ সেবক এবং খ্যাতনামা ব্যক্তিবর্গ গত ২০০৮ সালের ২ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির অবৈতনিক সম্পাদক এবং অন্যান্য পদে দায়িত্ব পালন করেন।
বর্তমানে এতিমখানার তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচেচ এতিমখানার ছেলেমেয়েদের জন্য বয়েজ হোম, গার্লস হোমদ ফরিদ উদ্দিন সিদ্দিকী উচ্চ বিদ্যালয়, স্যার সলিমুল্লাহ মুসলিম এতিমখানা, জুনিয়র গার্লস স্কুল, গোর-এ-শহীদ মসজিদ, গোর-এ-শহীদ মাদ্রাসা, সলিমুল্লাহ মেমারিয়াল কাব, সলিমুল্লাহ মেমোরিয়াল পাঠাগার, ভোকেশনাল ট্রেনিং এবং চিকিৎসা সেবা।